Wednesday, November 16, 2016

‘মেসি’র খোঁজে উত্তর কোরিয়া



সারা দুনিয়ার চোখে ‘রহস্যময়’ এক দেশ উত্তর কোরিয়া। পৃথিবী থেকে নিজেদের আড়ালে রাখাই যে দেশের নীতি, সে দেশ কিন্তু বাইরের পৃথিবীর দিকে চোখ রেখেই নিজেদের ফুটবল-ভবিষ্যৎ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এক ফুটবল একাডেমি দিয়েই উত্তর কোরিয়া স্বপ্ন দেখছে লিওনেল মেসির চেয়েও ভালো, প্রতিভাবান ফুটবলার তৈরির, এমনকি একদিন ফুটবলে বিশ্ব শাসনেরও!

ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে উত্তর কোরিয়ার অবস্থান ১২৬। দুবার বিশ্বকাপ খেললেও এশীয় ফুটবলে প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপানের চেয়েও পিছিয়ে তারা। কিন্তু তা হলে কী হবে, স্বপ্নটা যে তাদের আকাশছোঁয়া! ফুটবল একাডেমির প্রধান কোচ রি ইউ ইল তো বলছেনও, ‘আমরা আমাদের ছাত্রদের এমনভাবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, যেন ওরা মহা প্রতিভাবান হয়ে উঠতে পারে। এমনকি স্কিলের দিক দিয়ে লিওনেল মেসির মতো খেলোয়াড়কেও ছাপিয়ে যেতে পারে।’

এটা অবশ্য দূর ভবিষ্যতের স্বপ্ন। এখনকার লক্ষ্যটাও জানিয়েছেন ইউ ইল, ‘এই মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য এশিয়ায় আধিপত্য করা। অদূর ভবিষ্যতে আশা করি আমরা বিশ্ব ফুটবলেও আধিপত্য করতে পারব।’

কিন্তু প্রশিক্ষণ দিয়ে কি ‘মেসির চেয়ে ভালো’ ফুটবলার বানানো সম্ভব? তাদের প্রশিক্ষণটাই বা হচ্ছে কীভাবে? একাডেমিটিতে এই মুহূর্তে বিভিন্ন বয়সের ২০০ খেলোয়াড় আছে। এদের বয়স ৯ থেকে ১৫। খেলোয়াড়দের প্রায় ৪০ শতাংশই মেয়ে। সবাই পিয়ংইয়ংয়ের একাডেমিতে সকাল-বিকেল অনুশীলনে ব্যস্ত। কিছু প্রশিক্ষণ পদ্ধতি সবার চেনা। আবার কিছু আছে চমকে দেওয়া। যেমন সংগীতের তালে তালে কোরিওগ্রাফ আর বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রশিক্ষণ!

অবশ্য ‘মেসি’ বানানোর স্বপ্নের পাশাপাশি উত্তর কোরিয়াকে বাস্তবতাটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন দেশটির জাতীয় ফুটবল দলের নরওয়েজিয়ান কোচ ইর্য়ন অ্যান্ডারসন, ‘এই পদ্ধতিতে আসলে ওরা কোনো মেসি বানাতে পারবে না। তবে আমার মনে হয়, এশিয়ার মানের ভালো খেলোয়াড় তৈরি করতে পারবে।’ কারণটাও ব্যাখ্যা করেছেন অ্যান্ডারসন, ‘এখানে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে, কিন্তু তাদের সব সময় দেশের ভেতরেই থাকতে হবে। কেউই বাইরে (বিদেশের লিগে) যেতে পারবে না।’ ভালো ফুটবলার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে ইউরোপে খেলার বিকল্প দেখেন না অ্যান্ডারসন।

২০১০ বিশ্বকাপে ৩ ম্যাচে ১২ গোল খেয়ে বাড়ি ফেরা উত্তর কোরিয়া গতবার বাছাইপর্বই পেরোতে পারেনি। তাই নড়েচড়ে বসেছে দেশটি। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের গৌরব অন্তত ফিরিয়ে আনতে চায় উত্তর কোরিয়া। সেবার ইতালিকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে যাওয়া দলটি ইউসেবিওর পর্তুগালের বিপক্ষে একপর্যায়ে ৩-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ইউসেবিওর জাদুতে শেষ পর্যন্ত হেরে যায় ৫-৩ গোলে। সেমিফাইনালে আর খেলা হয়নি।

অবশ্য উত্তর কোরিয়া দেশটির মতোই তাদের ফুটবলও ‘লোকচক্ষুর অন্তরালে’। দেশের ক্লাবগুলো এশিয়ান টুর্নামেন্টে নিয়মিত খেলে না। ১১ দলের ঘরোয়া লিগে কোনো ম্যাচে দুই-তিন শর বেশি দর্শক হয় না। অনেকটা সামরিক কায়দায় চলে ফুটবলারদের প্রশিক্ষণ। জাতীয় দলের কোচ অ্যান্ডারসনেরও যেটি পছন্দ নয়, ‘আমার দলের খেলোয়াড়েরা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার খুব বেশি সুযোগ পায় না। শুধু অনুশীলন আর অনুশীলন...কিন্তু ম্যাচ খেলতে পারে না।’

এভাবে কি ‘মেসি’ তৈরি সম্ভব? দেখা যাক। সূত্র: এএফপি।

No comments:

Post a Comment

Pages

 

Sample text

Sample Text

 
Blogger Templates